ফরসেজ দিয়ে হাজার হাজার ডলার আয় সম্ভব?

আপনি হয়ত আপনার বন্ধুর ফেসবুক ডে তে “ফরসেজ দিয়ে টাকা আয়, আয় করতে চাইলে ইনবক্স, ফরসেজ থেকে আজকে এক দিনে এত আয় করলাম, এই কিনলাম” ব্লা ব্লা দেখতে দেখতে বিরক্ত কিংবা ফরসেজ থেকে আয় করতে চাচ্ছেন। আর আপনার মাথায় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কি এই ফরসেজ? এইটা খায় না মাথায় দেয়? আসলেই কি ফরসেজ থেকে আয় করে এই গরমে আমার রুমে একটা এসি লাগিয়ে নিতে পারবো? আসেন আমরা একসাথে সব উত্তর খুঁজে বের করি। হ্যাঁ আমি উত্তর দিবো না। আমরা একসাথে খুঁজে বের করবো। চলেন শুরু করি।

আমি যখন ফরসেজের সম্পর্কে জানতে পারি দেখি ফেসবুকে ধুমায়া মানুষ ডে দিতেছে ফরসেজ থেকে হাজার হাজার আয়ের করছে তারা তখন একটু চোখ কান খোলা রেখে সব নজরে রাখা শুরু করলাম। একটু খেয়াল করে দেখলাম এরা আসলে একই ছবি একেকজন বারবার ডে দিয়ে সবাইকে বলদ বানাইতেছে। তাই একটু গুগল, ফেওবুক আর ইউটিউব ঘাটতে লাগলাম দেখতে এইটা আসলে কি। কিন্তু বাংলা ভাষায় কোনো উত্তর পেলাম না। যেই ভিডিওই দেখি শুধু রেফারেল পাওয়ার উদ্দেশ্যে করা। তাই ভাবলাম নিজেই অনুসন্ধান করে বের করবো ব্যাপারটা।

যেই ভাবা সেই কাজ আমিও অনুসন্ধানের জন্য ৬৫০ টাকা দিয়ে ফরসেজে জয়েন হয়ে গেলাম দেখতে এর কাহিনীটা কি। তাই আজকে আমি যেই কথা গুলো বলবো এইগুলা নিজের টাকা খরচ করে কয়েক মাস একটা গ্রুপে থেকে তথ্য গুলো বের করছি তাই এইগুলো বানোয়াট ভেবে ভুল করবেন না। অনেক কষ্ট করে বিশাল মাপের রিসার্চ করে এইগুলো বের করছি। আর ফরসেজ নিয়ে জানার আগে কিছু জিনিস জেনে নেওয়ার দরকার চলেন সেগুলোও জেনে নেই।

এমএলএম কি?

MLM বা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং নাম আমরা প্রতিনিয়তই শুনে আসছি। এর সাথে জড়িত সবচেয়ে বড় নাম ডেস্টিনি। কিন্তু কখনও জানতে চেয়েছি কি এমএলএম কিভাবে কাজ করে। আমরা জানি না বলেই এই একই জিনিস নতুন নতুন পদ্ধতি আসলে আমরা এইগুলো ধরতে পারি না। এমএলএম বিজনেস হচ্ছে মাছের তেলে মাছ ভাজা তাই একে মানি সার্কুলেশনও বলা হয় অনেক যায়গায়। অর্থাৎ আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিয়ে এদের সদস্য হতে হবে, এরপর আপনি যদি তাদেরকে আপনার মত আরো সদস্য যোগার করে দিতে পারেন তাহলে আপনি লভ্যাংশ বা কমিশন পাবেন।

ডেস্টিনির মত এমএলএম না হলেও আজকাল ডিজিটাল এসেট নিয়ে নানান রকম এমএলএম বিজনেস শুরু হচ্ছে। খুব সম্প্রতি এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসা শুরু করেছে এসপিসি (SPC) নামের একটি গ্রুপ। খালিদ ফারহান ভাইয়ের এসপিসি বা এমএলএম নিয়ে অনেক ভিডিও থাকলেও সেটা এত মানুষের কাছে পৌছায়নি বলে, তারা জানে না বলে নতুন নতুন অনেকেই এই ফাঁদে পা দিচ্ছে। তাই এই ভিডিও গুলো দেখে নিলে এমএলএম নিয়ে সুন্দর স্পষ্ট ধারনা পাবেন আশা করি।

কাজ ও অকাজ

আমরা কাজ কাকে বলি? মনে রাখতে হবে কাজ, ব্যবসা বা ট্রেড আমরা সেগুলোকেই বলবো যেখানে কোনো পক্ষেরই কোনো ক্ষতি হবে না। একটি ইকো সিস্টেমের সবাই লাভবান হবে সেটাকেই আমরা কাজ বলবো। হয়ত কেউ একটু লাভবান হবে কেউ একটু কম কিন্তু কোনো পক্ষই একটুও ঠকবে না সেটাকেই ট্রেড বা কাজ বলবো। এছাড়াও কাজটায় একটা ভ্যালু থাকতে হবে। এমন কিছু কাজ হবে না যেটায় আপনি কিংবা কেউ একচুয়াল ভ্যালু পাচ্ছে না। ভ্যালু তখনই পাবে যখন সে জানবে কিভাবে কাজটি করতে হয়। কোনো কাজ না জেনেই হাজার হাজার টাকা আয় করুন এমন বিজ্ঞাপন যে দেখেন। এইখানের কাজটিই হলো অকাজ।

ধরেন আপনার গলা শুকিয়ে গেছে। আপনি দোকানে গেলেন দোকানদারকে ১৫ টাকা দিলেন সে আপনাকে এক বোতল পানি দিলো আর আপনি পান করে নিজের প্রয়োজন মিটালেন আর দোকানদার এর বদলে টাকা পেলো। এটি একটি সঠিক ট্রেড। আপনি একটি অফিসে আপনার শ্রম ও সময় দিয়ে অফিসের কাজ করে দেন আর অফিস আপনাকে মাস শেষে বেতন দেয়। এটিও একটি সঠিক ট্রেড। আপনার একটি কাজ পেলেন ৫০০০ টাকার, সেই কাজটি আপনি কাউকে দিয়ে করালেন ৪০০০ টাকার আর কিছু না করে আপনি পেলেন ১০০০ টাকা। এটিও একটি সঠিক ট্রেড।

কাজ অকাজের পার্থক্য, এমএলএম নিয়ে কেন জানলাম? সেটা ফরসেজ নিয়ে আলোচনার পরেই জানতে পারবো।

ফরসেজ

ফরসেজ কি?

ফরসেজ বিশ্বে প্রথম ডিসেন্ট্রালাইজ একটা সাইট যার অর্থ এটি কোনো সরকার, প্রতিস্থান বা ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত নয়। কারো টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কোনোরকম উপায় নাই। এই সাইট থেকে আয় করা টাকা সরাসরি জমা হবে আপনার ওয়ালেটে যার উপর ফরসেজের কোন নিয়ন্ত্রন নেই। সকল লেনদেন শুধু মাত্র আপনি নিজে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।

এখন প্রশ্ন আসে তাহলে ভাই ফরসেজের আয়ের উৎস কি? সোজা কথায় বললে, এই সাইট টা তৈরী করা হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রোমোট করতে। তাই এখন যে ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে সেগুলোতে ইনভেস্ট করছে মানুষ। যেমন: ইথেরিয়াম, ট্রন ইত্যাদি। সবাই ইনভেস্টমেন্টের ব্যাপারটা বোঝে না তাই ফরসেজ নিয়ে এসেছে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে রিস্ক একদমই থাকবে না কিন্তু ইনকাম হবে ধুমিয়ে। ফরসেজ থেকে কত টাকা ইনকাম করা সম্ভব? আসলে এর কোনো লিমিট নেই। এটা নির্ভর করে আপনি কতজনকে রেফার করছেন এবং আপনি কতগুলো স্লট কিনতে পারছেন তার উপর। নূন্যতম ১০ ডলার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম সম্ভব। আপনি কাউকে রেফার করতে না পারেও শুধু স্লট কিনেই ইনকাম সম্ভব।

এইগুলো ছিলো ফরসেজ যারা করে তাদের কিছু কথা। আসুন আমরা নিজেদের মত বুঝার চেষ্টা করি ফরসেজ কি কেন কিভাবে!

ফরসেজ থেকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?

ফরসেজ থেকে রেফার করে আয়

আপনি যে কোনো তিনজনকে রেফার করে তাদের বলে দিন আরো তিনজন করে রেফার করতে। প্রতি জনকে রেফার করার জন্য আপনি পাবেন কমিশন ডলার করে। আপনি যাকে রেফার করেছেন সে আপনার ডাউনলিংক আর আপনি আপলিংক। যেহেতু ফরসেজ ম্যাট্রিক্স এলগরদমে কাজ করে সেহেতু আপনি যাদের রেফার করেছেন, তারা আবার যাদের রেফার করেছে সকলের থেকেই (আপনার ডাউনলিংক এর ডাউনলিংক থেকেও কমিশন আপনি পাবেন। ফরসেজে যুক্ত হওয়ার আগে আমি যখন আমার আপলিংকে জিজ্ঞেস করলাম ফরসেজ থেকে কিভাবে আয় করা যায় তখন সে আমাকে এইগুলাই বুঝালো। কি শুনতে কেমন কেমন লাগতেছে তাই না? আচ্ছা আসেন ক্লিয়ার করি।

কোথা থেকে কি হইছে নিজেও বুঝতেছি না বানানোর পর। বুঝার আশা রাখবেন না দয়া করে। 😂

উপরের ছবিটায় খেয়াল করেন। ধরেন খালিদ ফারহান ভাই একদিন এনায়েত ভাইকে বললো এনায়েত আমি যখন লাখ লাখ টাকা কামানো শুরু করছি তখন তো তুমি হও নাই তো তুমি তো জানো না টাকা কিভাবে কামাইতে হয়। এখন কি তুমি লাখ লাখ টাকা কামাইতে চাও? এনায়েত ভাই বললো হ্যাঁ। ফারহান ভাই বললো তাহলে আমারে ৬০০ টাকা দাও। তোমাকে একটা একাউন্ট খুলে দেই তাহলে তুমি লাখ লাখ টাকা কামাইতে পারবা। এনায়েত ভাই খুশি মনে খালিদ ফারহান ভাইকে টাকা দিয়ে দিলো আর খালিদ ফারহান ভাই এনায়েত ভাইকে ফরসেজ খুলে দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয়ের উপায় বলে দিলো।

এইবার এনায়েত ভাই বাচ্চা – ১ এর কাছে গিয়ে বললো কিরে বাচ্চা তুই কি লাখ লাখ টাকা আয় করতে চাস? বাচ্চা – ১ বললো হ্যাঁ। এনায়েত ভাই জিজ্ঞেস করলো তুই কি গাড়ি বাড়ি করতে চাস? বাচ্চা – ১ বললো হ্যাঁ। এনায়েত ভাই বললো তাহলে দে আমাকে ৬০০ টাকা। বাচ্চা – ১ দিলো তাকে ৬০০ টাকা সেখান থেকে এনায়েত ভাই পেলো ৩০০ টাকা। এরপর একই ভাবে বাচ্চা – ২ কেউ একাউন্ট খুলিয়ে এনায়েত ভাই পেলো আরো ৩০০ টাকা। এভাবে ৬০০ টাকা দিয়ে একাউন্ট খুলে এনায়েত ভাই দুইজনকে একাউন্ট খুলিয়েই একদিনেই সেই ৬০০ টাকা পেয়ে গেলো। কিন্তু এইবার বাচ্চা – ৩ এর এইখানে এসে একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস ঘটলো। বাচ্চা – ১ ও বাচ্চা – ২ এর ৩০০ টাকা যেমন এনায়েত ভাই পেয়েছে এইবার বাচ্চা – ৩ এর এই ৩০০ টাকা এনায়েত ভাই পাবে না। এই টাকাটা পাবে খালিদ ফারহান ভাই।

এরপরের ধাপে এই বাচ্চারা আবার কিছু কাচ্চাকে ধরবে। তারাও গাড়ি বাড়ির জন্য একাউন্ট খুলবে।

এইভাবেই বাচ্চা – ১ কাচ্চা – ১ ও কাচ্চা – ২ থেকে ৩০০ + ৩০০ = ৬০০ টাকা পাবে,

বাচ্চা – ২ কাচ্চা – ৪ ও কাচ্চা – ৫ থেকে ৩০০ + ৩০০ = ৬০০ টাকা পাবে,

আর বাচ্চা – ৩ কাচ্চা – ৭ ও কাচ্চা – ৮ থেকে ৩০০ + ৩০০ = ৬০০ টাকা পাবে।

আর কাচ্চা – ৩, কাচ্চা – ৬ ও কাচ্চা – ৯ এর টাকাটা তাহলে কে পাবে? অবশ্যই এনায়েত ভাই। মানে তার বাচ্চাদের রেফারের কারনে একবারেই কোনো কষ্ট ছাড়াই ৯০০ টাকা আয় হয়ে গেলো।

বাচ্চা – ১, বাচ্চা – ২ ও বাচ্চা – ৩ ও এই পর্যন্ত টাকা আয় করে ফেললো। কিন্তু কাচ্চা ১ – ৯ কিন্তু এখনও আয় করলো না। মানে তাদের যদি আয় করতে হয় তাহলে মোট ২৭ জনকে আবার এই জিনিসে আনতে হবে। ব্যাপারটা বুঝলেন কিছু?

ফরসেজ থেকে স্লট কিনে আয়

এইখানে আপনাকে ইনভেস্ট করতে হবে। স্লটের মূল্য ৩ ডলার থেকে শুরু হয়ে ৩৬৫৯ ডলারে গিয়ে শেষ। আপনি ইচ্ছা মতো ধাপে ধাপে স্লট কিনতে পারবেন। প্রথম ৩ ডলারের একটি স্লটে একটা রেফার করলে আপনি পাবেন ৩ ডলার এবং ৩৬৫৯ ডলারের স্লটে একটা রেফার করলে আপনি পাবেন ৩৬৫৯ ডলার। যদি X4 লেভেলে আপনি স্লট কিনেন তবে আপনার ইনকাম (অটোরেফার) আসবে চারিদিক থেকে। আপ, ডাউন, ডানে, বামে এমন টাইপ। স্লট কেনা থাকলে এইটা অটোমেটিক আসবে, আপনাকে কিছুই করতে হবেনা।

আয় করা টাকা তুলবো কিভাবে?

আচ্ছা আয় তো করলেন রেফার করেই হউক বা স্লট কিনেই হউক আপনি টাকা আয় করলেন এখন এই টাকাটা দিয়ে এসি কিনতে তো টাকাটা হাতে আসা প্রয়োজন তাই না। সেখান থেকেই প্রশ্ন আসবে এই টাকাটা তুলবেন কিভাবে? গুগল, ফেসবুক ইউটিউব সব ঘেটেও এই উত্তর আপনি বের করতে পারবেন না। কারন এই টাকা তোলার সিস্টেম অদ্ভুত। মনে আছে ফরসেজের পরিচিতি পর্বে আমরা একটি ওয়ালেট সম্পর্কে জেনেছিলাম (এই সাইট থেকে আয় করা টাকা সরাসরি জমা হবে আপনার ওয়ালেটে যার উপর ফরসেজের কোন নিয়ন্ত্রন নেই। সকল লেনদেন শুধু মাত্র আপনি নিজে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন) এই ওয়ালেটের মাধ্যমে আপনার টাকা জমানো হবে ঠিকই কিন্তু এই টাকা আপনি কোনো ব্যাংক কিংবা অন্য কোনো ক্রিপ্টো ওয়ালেটে (যেমন কয়েন বেস) নিতে পারবেন না। অর্থাৎ এই ওয়ালেট যারা ইউস করে শুধুমাত্র তাদেরই দিতে পারবেন এবং তাদের থেকেই গ্রহন করতে পারবেন। তো আপনার প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে এইখান থেকে টাকা তুলবো কিভাবে?

১. কেউ ফরসেজে জয়েন করতে চাইলে তার লাগবে ফি হিসেবে এই ওয়ালেটে কিছু ক্রিপ্টো কারেন্সি। এই টাকা তো সে কোথাও থেকে লোড দিতে (কার্ড কিংবা ব্যাংকের মাধ্যমে) পারবে না। তখন সে আপনার থেকে বিকাশে বা নগদে টাকা দিয়ে সেই ক্রিপ্টো কারেন্সি কিনে নিয়ে একাউন্ট খুলতে পারবে। তো তার যদি জয়েন করতে ৬০০ টাকা পরিমানের ক্রিপ্টোকারেন্সি লাগে আপনি তাকে এড করিয়ে এই টাকা বিকাশে নিতে পারবেন।

২. কারো যদি স্লট কিনতে এই কারেন্সি লাগে আর সে যদি নতুন জয়েন হয়ে থাকে তাহলে তো তার কাছে এই কারেন্সি নেই। তখন সে আপনাকে বিকাশে টাকা দিবে আপনি তাকে স্লট কিনার মত কারেন্সি কিনে দিলেন। আর বিকাশে আপনি তো টাকা পেলেনই।

৩. ধরেন কেউ কাউকে জয়েন করাবে তার এখন কিছু কারেন্সির দরকার। তখন আপনাকে বিকাশে টাকা দিবে আপনি তাকে কারেন্সি দিবেন।

এইভাবেই আপনাকে এই কারেন্সি সেল করে করে টাকা উইথড্র দিতে হবে। তাই আপনি হাজার হাজার ডলার আয় করলেও লাভ নাই কোনো।

ফরসেজ কি তাহলে স্ক্যাম?

ফরসেজে জয়েন করতে হলে ৬০০ টাকা ফি লাগে। সেই ৬০০ টাকা থেকেই রেফারারকে দিয়ে দেয় ৩০০। আর কোম্পানি রেখে দেয় ৩০০। আসুন দেখি খালিদ ফারহান ভাই থেকে কাচ্চা – ৯ পর্যন্ত মোট কত আয় হলো।

খালিদ ফারহান ভাইয়ের আয় = ৬০০ টাকা

এনায়েত ভাইয়ের আয় = ১৫০০ টাকা

বাচ্চা – ১ এর আয় = ৬০০ টাকা

বাচ্চা – ২ এর আয় = ৬০০ টাকা

বাচ্চা – ৩ এর আয় = ৬০০ টাকা

কাচ্চা ১ – ৯ এর আয় = ০ টাকা

মোটঃ ৩৯০০

এইবার আসুন দেখি খালিদ ফারহান ভাই থেকে কাচ্চা – ৯ পর্যন্ত এই ১৪ জন একাউন্ট খোলার জন্য কোম্পানির মোট কত আয় হলো। খালিদ ভাইয়ের একাউন্ট খোলার পুরা ৬০০ টাকাই কোম্পানি পাইছে এরপর ১৩ জনের থেকে ৩০০ করে মোট ৪৫০০ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানির কোনো কষ্ট ছাড়াই এত বিশাল আয় হয়ে গেলো। এরপর নেটওয়ার্ক যত বাড়তে থাকবে কোম্পানির আয় ততই বাড়তে থাকবে। তো এইটা স্ক্যাম না তো কি?

ফরসেজ কি তাহলে অকাজ কিংবা এমএলএম?

এই প্রশ্ন যদি আপনার এখনও থাকে তাহলে আসলেই আমার কিছু করার নেই। দেখুন অকাজের সংজ্ঞায় বলেছিলাম যদি কোনো ইকোসিস্টেমের একজনও ঠকে তাহলে সেটা কাজ না বরং অকাজ। আমি আপনাদের যে উদাহরণ দিলাম সেখানে কাচ্চারা কেউই টাকা আয় করে নাই। তাদের আয় করতে হলেও তাদের মতই কাউকে বোকা বানিয়ে তাদের আয় করতে হবে আবার তাদের আয় করতে হলেও এমন কাউকে আনতে হবে। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত বিশাল সংখ্যক মানুষ এইখানে ঠকেই যাচ্ছে। অথবা যারা আয় করছে তারা আয় করলেও টাকা হাতে পাওয়ার জন্যও কোনো বোকার জয়েনিং এর উপর নির্ভরশীল। এইটাকে কি আপনি এখন কাজ বলবেন?

এবার আসা যাক ফরসেজ কোনো এমএলএম কিনা। অবশ্যই এইটি এমএলএম। এমএলএমের সাথে তুলনা করলে আমরা কি দেখতে পাই?

ফরসেজএমএলএম
ফরসেজে জয়েন করতে হলে কারো রেফারেলের মাধ্যমে জয়েন করতে হয়।এমএলএমে যুক্ত হতে হলে কারো না কারো রেফারেলের মাধ্যমে জয়েন করতে হয়
ফরসেজে জয়েন করতে জয়েনিং ফি আছে বা ক্রিপ্টো কিনতে হয়।এমএলএমে জয়েন করতেও একটি নির্দিষ্টি প্রোডাক্ট কিনে বা জয়েনিং ফি দিয়ে যুক্ত হতে হয়।
ফরসেজে একচুয়াল প্রোডাক্টের কোনো ভ্যালু নাই এবং এর মূল টার্গেট নতুন মেম্বার জয়েন করানো।এমএলএমেও একচুয়াল প্রোডাক্টের কোনো ভ্যালু থাকে না এবং এর মূল টার্গেট নতুন মেম্বার জয়েন করানো।
ফরসেজ একটি পিরামিড স্কিম।এমএলএম একটি পিরামিড স্কিম।
ফরসেজে শেষের স্টেজের মানুষরা সবসময় ঠকে যায়।এমএলএমে শেষ স্টেজের মানুষরা ঠকে যায়।

এইগুলো থেকেই আশা করি বুঝে গেছেন ফরসেজ এমএলএম কিনা।

মানুষ কেন ফরসেজের খপ্পরে পড়ে?

প্রথমত ফরসেজ যারা আপনাকে খুলায় তারা শুরুতেই আপনাকে বিভিন্ন আদা পড়া দেয়, কিছু কঠিন কঠিন টার্ম শুনায় যার কারনে আপনাদের মনে হয় হ্যাঁ হয়ত এগুলো সঠিক। আর টাকা আয় করে তা উইথড্র করবেন কিভাবে সেগুলোও বুদ্ধি করে চেপে যায়। কারন তাদের কাজ আপনাকে দিয়ে একাউন্ট খোলানো। সেই একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে তারা ৩০০ টাকা পেয়ে যাচ্ছে এতেই তাদের লাভ। তাই আপনার কথা চিন্তা না করলেও হবে। আর আপনি যখন ডিসেন্ট্রালাইজড, ক্রিপ্টোকারেন্সির মত বড় বড় টার্ম শুনেন তখন আর এইটা এমএলএম বা পঞ্জি স্কিম কিনা সেদিকে লক্ষ রাখেন না।

দ্বিতীয় কারন হতে পারে আপনার বন্ধুর হাজার হাজার টাকার ছবি দেখে আপনি লোভ সামলাতে না পেরে অথবা কিছু পকেট মানির আশায় একাউন্ট করে ফেলেন। আর যেহেতু ৬০০ টাকার মত সামান্য কিছু টাকা তাই আপনাদের মনে হয় চেষ্টা করেই দেখি না। ৬০০ টাকা তো আর বেশি না। হ্যাঁ বেশি না এই ৬০০ টাকা। আর আপলিংক আপনাকে এইভাবেই বুঝাবে মাত্র ৬০০ টাকা ইনভেস্ট করে এত আয় করতে পারতেছো। দুইজন আসলেই একদিনে এই ৬০০ টাকা উঠে আসে। কিন্তু সম্পূর্ণ জিনিসটা তো একদম ফ্রড। আর মাত্র ১৪ জনের একটি সার্কেল থেকেই কিভাবে কোম্পানি ৪৫০০ টাকা আয় করে দেখলেন তো? এইভাবে কয়েক হাজার একাউন্ট থেকে কত টাকা আয় আসে একটু ভেবে দেখুন। 🙂

ফরসেজিয়ানদের কিছু যুক্তি এবং এর খণ্ডন

কোনো ফরসেজিয়ান যখন আপনাকে দিয়ে একাউন্ট করাতে চাবে তখন তারা কিছু যুক্তি দিবে। চলেন শুনে আসি তাদের কি মত এবং শিখি কেন এইগুলো স্ক্যাম।

ফরসেজ ডিসেন্ট্রেলাইজড

ফরসেজ বিশ্বে প্রথম ডিসেন্ট্রালাইজ একটা সাইট যার অর্থ এটি কোনো সরকার, প্রতিস্থান বা ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত নয়। কারো টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কোনোরকম স্কোপ নাই। আচ্ছা ফরসেজ ডিসেন্ট্রালাইজড মানলাম। এর মানে কেউ এই সিস্টেম তৈরি করে হাওয়া হয়ে গেছে এখন কেয়ামত পর্যন্ত এইটা একা একাই চলতে থাকবে আর আয় হতে থাকবে তাই না? কিন্তু এই যে ডোমেইন হোস্টিং এইটা তো কেউ না কেউ কিনেছে? কোনো অথোরিটি আছে এর। এর বছর বছর রিনিউ করা লাগে। এইটা এক বছর রিনিউ না করলেই অফ হয়ে যাবে। তখন কি হবে? আর যেহেতু এর কোনো অথোরিটি নাই তাই এইটা পরে কোল্যাপ্স করলে ধরবেন কাকে?

ফরসেজ ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে পরিচালিত

তাদের আরেকটি যুক্তি হলো ফরসেজ ক্রিপ্টো কারেন্সি দিয়ে পরিচালিত এবং এর টাকা আপনি আপনার ওয়ালেটে পাবেন সরাসরি। তাই ফরসেজ থেকে এতে ফ্রড হওয়ার কোনো ভয় নাই। আচ্ছা ক্রিপ্টো দিয়ে হলেও কি? এই টাকা আয় করে এই ওয়ালেট ছাড়া আর কোনো ওয়ালেটে তো রাখা যায় না বা এই ওয়ালেট দিয়েও তো কিছু কেনাকাটা করা যায় না তাহলে লাভ কি?

ফরসেজ দিয়ে তো আমি আয় করছি

আপনি আয় করছেন এইটা ভালো কথা। আগের লেখাগুলো পড়লে অবশ্যই বুঝতে পারছেন আপনি আয় করলেও আপনার আয়টা আসছে কাউকে ঠকিয়ে। আর এই আয় থেকে আপনার কোনো স্কিল ডেভেলপ হচ্ছে না। যদি লোক ঠকানো কোনো স্কিল মনে করে থাকেন তাহলে অবশ্য আপনার স্কিল ডেভেলপ হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু ভালো ভাবে ভেবে দেখুন অন্যের টাকা আর সময় নষ্ট করা ছাড়া আপনি আর কি করছেন? এই কালে কিছু টাকা আয় করলেন ঠিকই কিন্তু পরকালে এই জিনিসটার হিসাব কিভাবে দিবেন?

শেষ কিছু কথা

প্রথমত যারা জেনে বুঝে এইসব করছেন তাদের বলবো এইভাবে মানুষ ঠকিয়ে আর কয়দিন? আপনিও বুঝতেছেন আপনি অন্যকে ঠকিয়ে টাকা আয় করছেন। কেউ হয়ত তার এক মাসের জমানো টাকা দিয়ে আপনার কাছে একাউন্ট খুলছে আর আপনি এমন কয়েক জনের টাকা দিয়ে সাজেকে ট্যুর দিয়ে আসলেন আর ফেসবুকে ছবি দিয়ে লেখলেন ফরসেজের ইনকাম থেকে ট্যুর। এই দেখে আরো ৫ জন জয়েন হলো। কিন্তু লং টার্মে কার কি লাভ হলো কার কি ক্ষতি হলো চিন্তা করে দেখুন প্লিজ।

যারা না বুঝে করছেন তারা তো বুঝে গেলেন কাজটি ঠিক না। তাই আজ থেকেই দয়া করে কাজটি বন্ধ করে দিন। যদি অনলাইনে আসলেই ভালো কিছু করতে চাল তাহলে এমন কিছু শিখুন যার ভ্যালু আছে (ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা ডিজিটাল মার্কেটিং শিখবেন কোথা থেকে এই বিষয়ে জানতে আমার এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন) অনলাইনে ক্যারিয়ার করার ইচ্ছা না থাকলে ভালো ভাবে একাডেমিক লেখাপড়া করুন, চাকরি করুন, ব্যবসা করুন। এইভাবে লোক না ঠকিয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা করুন।

আর আপনি যদি লোভে পড়ে একাউন্ট খুলতে গিয়ে এই আর্টিকেলে চলে আসেন তাহলে আপনাকে বলবো ভাই নিজের লোভকে সামলান। হয়ত আপনি স্বীকার করবেন না কিন্তু আপনার ভিতরের লোভের কথা তো আপনিই জানেন।

ফরসেজ লোভ সম্পর্কে আমি কিছুটা পরিস্থিতি জানি। গত মার্চের ১৫ তারিখে আমার ব্যবসার কিছু টাকা দিয়ে আমি ফেসবুকে ডে দেই আলহামদুলিল্লাহ্‌ ফরসেজ। ওইদিন ৪ ঘন্টায় ৫০ জন ম্যাসেজ দিছে বিস্তারিত জানতে। হয়ত সবাই এইখানে লোভী না, কারো কারো হয়ত একটা ইনকাম সোর্স আসলেই দরকার। কিন্তু টাকার ছবি দেখে লোভে এমন মানুষও ইনবক্স করছে যে কখনই আমাকে ম্যাসেজ দেয় নাই। এরপরের দিনই আমি খালিদ ফারহান ভাইয়ের সেই বিখ্যাত উক্তিটা আবার ডে দেই। উক্তিটা হলোঃ

আপনি যদি লোভী হন এবং চালাক হন তখন সমস্যা নাই, যদি আপনি বোকা হন এবং লোভী না হন তাহলেও সমস্যা নাই। কিন্তু যদি আপনি বোকা হন আর লোভী হন তাহলে অনেক সমস্যা আছে। মানে আপনার কপালে শনি আছে।

কেন আমি কি চাইলে পারতাম না সেই ৫০ জনের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে দিয়ে একাউন্ট খুলাইতে? ২০ জন একাউন্ট খুললেই এক রাতে ৬০০০ টাকা আয় করে ফেলতে পারতাম। মাত্র ৫০ হাজার টাকার ছবি দিয়ে আনুমানিক ৬০০০ টাকা কামানো কিন্তু খুব খারাপ ডিল না। কিন্তু ধান্দার টাকা যেভাবে আসে সেভাবেই যায়।

আর হ্যাঁ ফরসেজ আগে ট্রনে চলছে, সেটা শেষ এখন আবার শুরু করছে BUSD নামক ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে। ফরসেজিয়ানরা বুঝানোর চেষ্টা করতেছে এই BUSD একটা ফিক্সড কারেন্সি, তাই এর ঝামেলা নাই ব্লা ব্লা। কিন্তু কাহিনী একই। ওই আগের ওয়ালেটেই নতুন কারেন্সি দিয়ে একাউন্ট খুলিয়ে আবার আগের মত বাটোপারি করবে। তাই এইটা ভিন্ন জিনিস বুঝাইতে আসলে বুঝবেন একই জিনিস নাম ভিন্ন দিয়ে আদা পড়া দিতেছে। আবার ফরসেজ নিয়ে বললাম এর মানে এই না যে ফরসেজ ছাড়া এমন আর কিছু নাই। ফরসেজ ছাড়াও আরো এমন অনেক সাইট আছে। যেমন ফিউচার ট্রন। সব একই গোয়ালের গরু।

আর যারা কিছু না জেনেই আর করতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, যখন আপনি শুনেন “কিছু না জেনেই আয় করতে চান? কম্পিউটার, ইন্টারনেট, আজকের বিশ্ব, প্রযুক্তি কিচ্ছু সম্পর্কে ধারনা থাকা লাগবে না। বিশেষ কোনো জ্ঞান ছাড়াই ক্লিক করে, একাউন্ট করে, রেফার করেই কোটিপতি হয়ে যেতে পারবেন” এই টাইপ কথা আর আপনি আয় করতে নেমে যেতে চান আপনি কি বুঝেন এর মানে কি? আমার কাছে এইগুলা এমন শোনায় “আপনি কি গরু? আপনি কি ছাগল? আপনি গরু ছাগল গাধা হয়েও আয় করতে চান?” টাকা আয় করা এত সহজ কাজ না। আগে নিজেকে যোগ্য করে তুলুন। টাকা এমনেই আসতে থাকবে। প্রচুর দরকার হলেও কিছু করার নাই। টাকা আয়ের বা সফলতার কোনো শর্টকাট হয় না। তাই আশা করবো ব্যাপারটা বুঝবেন এবং নতুন কোনো স্কিল গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন। আর দোয়া করবো যেন আপনিও একদিন সত্যি সত্যিই হাজার হাজার ডলার আয় করতে পারেন।

বিঃদ্রঃ এনায়েত ভাই আর খালিদ ফারহান ভাইয়ের ছবি ইউস করছি দেখে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। জিনিসটা নেহায়েতই মজা করে সার্কাজম করে দেওয়া হয়েছে। এনায়েত ভাইয়ের পারমিশন নিয়েই করেছি (খালিদ ফারহান ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি যদিও) এবং শুধুমাত্র শেখানোর জন্য উদাহরণ স্বরূপ ব্যবহার করেছি। কেউ সিরিয়াসলি নিবেন না। তারা এইসবের সাথে কোনো ভাবেই যুক্ত না।

15 thoughts on “ফরসেজ দিয়ে হাজার হাজার ডলার আয় সম্ভব?”

  1. অনেক ভাল লিখেছো ভাই। দোয়া করি আরো এভাবে লিখে যেতে পারো। আর লেখা টা আসলেই অনেক ইনফরমেটিভ ছিল। 🖤

  2. A Rising Star ❤️!
    Few days ago, a guy met with me with his referral link of an MLM company. At that time, I don’t know anything about any Forex, MLM or whatever! I was new in onlinethen. I don’t know how to search in online for something. I had not enough money with their treading. They want to give me a loan. I just refused it. And he told me ” You are doing wrong”. When I thought about that I felt I was wrong until I watched the videos of Mr. Khalid Farhan vai & Dhruv Rathee. Specially thanks to them and also to you little brother. Do you mind for calling you little brother?

  3. অনেক ধন্যবাদ দাদা সুন্দর একটা পোস্ট দেওয়ার জন্য আশা করি যারা কাজ করছে তারা বাদ দিয়ে দেবে

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *